হাত-পা ঝিনঝিন করে কেন, এটা কি মারাত্মক রোগের লক্ষণ?

অনেকেরই হঠাৎ হাত বা পা ঝিনঝিন করার অভিজ্ঞতা আছে। কখনও দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকলে, আবার কখনও স্নায়ুতে সামান্য চাপ পড়লে এই অনুভূতি হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় পারেসথেসিয়া (Paresthesia)। সাধারণত এটি ক্ষণস্থায়ী এবং নির্দোষ হলেও, ঘন ঘন বা দীর্ঘস্থায়ী ঝিনঝিন ভাব কোনো গুরুতর রোগের ইঙ্গিত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।

সাধারণ কারণ:
স্বল্প সময়ের জন্য হাত-পা ঝিনঝিন হওয়া প্রায়ই ঘটে রক্ত সঞ্চালনে সাময়িক ব্যাঘাত বা স্নায়ুতে চাপ পড়ার কারণে। যেমন-

দীর্ঘক্ষণ পা ক্রস করে বসা, হাতের নিচে মাথা দিয়ে শোয়া, আঁটসাঁট জামাকাপড় বা গয়না পরা। এগুলোতে রক্তপ্রবাহ কমে গিয়ে সাময়িকভাবে স্নায়ুর সংকেত বিঘ্নিত হয়, যা ঝিনঝিন অনুভূতি তৈরি করে।

সম্ভাব্য রোগের লক্ষণ:
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘন ঘন বা স্থায়ীভাবে হাত-পা ঝিনঝিন করা হলে তা কয়েকটি মারাত্মক বা দীর্ঘস্থায়ী রোগের সংকেত হতে পারে-

ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা দীর্ঘ সময় নিয়ন্ত্রণে না থাকলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি। এতে হাত-পা ক্রমাগত ঝিনঝিন বা অবশ হয়ে যেতে পারে।

ভিটামিনের অভাব: বিশেষ করে ভিটামিন বি-১২-এর ঘাটতি স্নায়ুর কার্যকারিতা নষ্ট করে।

স্নায়ুর রোগ (Neuropathy): স্নায়ুর প্রদাহ বা ক্ষতি নানা কারণে হতে পারে, যেমন—সংক্রমণ, আঘাত বা অটোইমিউন রোগ।

স্ট্রোক বা ব্রেন টিউমার: মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হলে বা স্নায়ু চাপে পড়লে হঠাৎ ঝিনঝিন ভাব শুরু হতে পারে, যা বিপজ্জনক সংকেত।

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS): এই দীর্ঘস্থায়ী স্নায়ুরোগে হাত-পায়ে অসাড়তা ও ঝিনঝিনভাব প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

ঝিনঝিন ভাব হঠাৎ শুরু হয়ে দীর্ঘ সময় থাকে, এর সাথে দুর্বলতা, হাঁটতে অসুবিধা, মাথা ঘোরা বা কথা জড়িয়ে যাওয়া দেখা দেয়, ক্রমে উপসর্গ বাড়তে থাকে বা দৈনন্দিন কাজে প্রভাব ফেলে

চিকিৎসকদের পরামর্শ, সাময়িক ঝিনঝিন সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে নিয়মিত বা তীব্র ঝিনঝিন হলে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো উচিত। সময়মতো রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসায় জটিলতা অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*