দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাচ্ছেন দশম গ্রেড

দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিগগিরই দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাবেন। বিষয়টি এখন প্রধান উপদেষ্টার দফতরের অনুমোদনের অপেক্ষায়। অনুমোদন মিললেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এরপর থেকেই প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাবেন বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে, সহকারী শিক্ষকদের দাবি করা ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নতুন গঠিত বেতন কমিশন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন শিগগিরই হবে।’

আদালতের নির্দেশনা ও সরকারি উদ্যোগ

দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন-ভাতার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ বিষয়ে পদক্ষেপ না থাকায় ৪৫ জন শিক্ষক উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত রায়ে তাদের বেতন ১১তম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করার নির্দেশ দেন।

ওই রায় অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয় রায় বাস্তবায়নে সম্মতি দেয়। এরপর ৩ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এক অফিস আদেশে জানায়, রিটকারী ৪৫ জন শিক্ষককে দশম গ্রেড প্রদান করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।

দাবি আদায়ে আন্দোলন

এই প্রক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক মহাসমাবেশ করেন এবং চার দফা দাবি পেশ করে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি।

সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘শুধু রিটকারীরা নয়, দেশের সব প্রধান শিক্ষকই দশম গ্রেড পাবেন—এটাই ন্যায্য। এছাড়া সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে সকল প্রধান শিক্ষকের জন্য দশম গ্রেডে জিও জারি, চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি এবং ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড—এসব দাবি জানানো হয়েছে।’

সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা (বর্তমান পদবি ‘শিক্ষক’) দীর্ঘদিন ধরে ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে কনসালটেশন কমিটি সম্প্রতি তাদের জন্য ১২তম গ্রেড এবং ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক’ নামে নতুন পদ সৃষ্টির সুপারিশ করে। শিক্ষকরা এই সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেন এবং একাধিকবার আন্দোলন, কর্মবিরতি পালন করেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, ‘আমরা সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ ও ১২তম গ্রেড—উভয়কেই দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। ৬৫ হাজার ৫২৪ জন প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেডে জিও জারি ও সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেড চাই। এছাড়া সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে শতভাগ পদোন্নতির ব্যবস্থা এবং চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের যোগদানের তারিখ থেকে পদোন্নতি দিতে হবে। ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে শর্তহীনভাবে উচ্চতর গ্রেডও বাস্তবায়ন করতে হবে।’

নতুন কর্মসূচির ঘোষণা

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি ও সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ বিভাগীয় কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘আমাদের দাবি বাস্তবায়নে অগ্রগতি না থাকায় আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছি। সরকার যদি ইতিবাচকভাবে বিষয়টি বিবেচনা করে, তবে আন্দোলনের প্রয়োজন পড়বে না।’

ঐক্য পরিষদের তিন দফা দাবি হলো, সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ; ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।

পরিষদের পক্ষ থেকে আগামী ৩০ আগস্ট কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*