
এসএসসি পাসের পর কলেজে ওঠার সময়টাই একজন শিক্ষার্থীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড়। ঠিক এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে ভবিষ্যতে ভুগতে হতে পারে। অনেকে না জেনেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, যার খেসারত দিতে হয় পুরো কলেজজীবনে। তাই ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হলে আগেভাগেই জানতে হবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
আবেদন প্রক্রিয়া কেবল অনলাইনেই
বর্তমানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন করা যায় একমাত্র অনলাইনে, নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (www.xiclassadmission.gov.bd)। একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ পছন্দক্রম অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারবেন। আবেদন করতে লাগবে এসএসসি রোল, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পাশের সাল, বোর্ডের নাম এবং একটি সচল মোবাইল নম্বর। আবেদন ফি ২২০ টাকা যা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি) মাধ্যমে জমা দিতে হয়। আবেদন শেষে কনফার্মেশন কপি সংগ্রহ করে রাখা আবশ্যক।
মেধাক্রম ও নিশ্চিতকরণ কীভাবে হবে?
ভর্তির জন্য তিন ধাপে মেধা তালিকা প্রকাশ পায়। যারা প্রথম তালিকায় সুযোগ পাবে, তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ২২০ টাকা দিয়ে ভর্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা সময়মতো টাকা জমা না দিয়ে বাদ পড়ে যায়, যা পুরো বছরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই মেধা তালিকা প্রকাশের সময় মোবাইলের এসএমএস ও ওয়েবসাইট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
বিভাগ নির্বাচন: কেবল নম্বর নয়, আগ্রহও জরুরি
বিজ্ঞান বিভাগে যেতে চাইলে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো ফলাফল থাকা জরুরি এবং জিপিএ ৪.০০ বা তার বেশি হলে ভালো কলেজে সুযোগ মিলবে। ব্যবসায় শিক্ষায় ৩.৫০ এবং মানবিকে তুলনামূলকভাবে কম জিপিএ হলেও অনেক কলেজে ভর্তি পাওয়া সম্ভব। তবে কেবল জিপিএ দেখে নয়, নিজের আগ্রহ, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও বিষয়ভিত্তিক সক্ষমতা বিবেচনা করে বিভাগ বেছে নেওয়া উচিত।
কোন কলেজ বেছে নেবেন?
কলেজ বাছাইয়ের সময় কেবল নাম নয়, দেখতে হবে শিক্ষার মান, শিক্ষকসংখ্যা, ল্যাব সুবিধা, ক্যান্টিন, পাঠাগার, বাসস্থান ও যাতায়াত ব্যবস্থা, টিউশন ফি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য পরিবেশ কতটা নিরাপদ – সেটাও বড় বিষয়। ভালো কলেজ মানেই বেশি টাকা নয়; অনেক সরকারি কলেজেও ভালো মানের শিক্ষা পাওয়া যায়।
ভর্তি ফি ও বৃত্তির সুযোগ
সরকারি কলেজে ভর্তি ফি সাধ্যের মধ্যেই থাকে, যা ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। বেসরকারি কলেজগুলোতে এটি ৮ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। তবে অনেকে ভালো ফল করলে বৃত্তি বা ছাড়ের সুবিধা পেয়ে থাকে, যা জানা ও ব্যবহার করাও জরুরি।
ভর্তি নিশ্চয়নের জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে
ভর্তি নিশ্চয়নের সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকতে হবে এসএসসি পরীক্ষার মার্কশিট ও সনদ (অনলাইন কপি চলবে), প্রবেশপত্র, ২ থেকে ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, অনলাইন আবেদন কনফার্মেশন কপি, এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মোবাইল নম্বর।
যেসব ভুল করলে বড় ক্ষতি হতে পারে
অনলাইনে ভুল তথ্য প্রদান, সময়মতো টাকা না জমা দেওয়া, যাচাই-বাছাই না করে কলেজ পছন্দ করা কিংবা অন্যের কথায় সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই ভুলগুলো শিক্ষার্থীদের পুরো কলেজজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা ও তথ্যভিত্তিক যাচাই করা একান্ত প্রয়োজন।
কে কে আবেদন করতে পারবে?
২০২৩, ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ডে আবেদন করতে পারবে।
কোটার নিয়মাবলি
মোট আসনের মধ্যে ৯৩ শতাংশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাকি ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা অধীনস্থ দপ্তরে কর্মরতদের সন্তানের জন্য বরাদ্দ। তবে এসব কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধা তালিকা অনুযায়ী ভর্তি দেওয়া হবে।
Leave a Reply