
প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন হয়েছে। তবে নির্বাচনে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সংরক্ষিত নারী সদস্যসহ মোট ২৭টি পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। জয়ীরা জামায়াতপন্থি হিসেবে পরিচিত।
অ্যালামনাই কমিটির ৫১টি পদের মধ্যে অন্য পদগুলোর জন্য শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এই ২৪ পদের ২৩টিতে জয়ী হয়েছেন জামায়াতপন্থিরা। ভোট গণনা শেষে এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ২৪টি পদের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম খান।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা হলেন- সভাপতি পদে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মো. রফিকুল ইসলাম খান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজাম উদ্দীন, সহসভাপতি (সংরক্ষিত মহিলা) সাবরীনা শারমিন, কোষাধ্যক্ষ জে এ এম সকিলউর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংরক্ষিত মহিলা) ড. ইসমত আরা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইমাজ উদ্দিন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কবির উদ্দীন, শিক্ষা ও পাঠাগার সম্পাদক ড. মো. নাসির উদ্দিন, যুগ্ম শিক্ষা ও পাঠাগার সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম, যুগ্ম তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. মো. নূরুল ইসলাম, যুগ্ম-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু সালেহ মো. আব্দুল্লাহ।
যুগ্ম প্রচার, প্রকাশনা ও জনসংযোগ সম্পাদক মোহা. আশরাফুল আলম ইমন, যুগ্ম ক্রীড়া সম্পাদক রুকন উদ্দিন মো. রওশন জামির খান, দফতর সম্পাদক কাজী মামুন রানা, যুগ্ম দফতর সম্পাদক মো. মোজাহিদ হাসান, আইটি সম্পাদক মো. মাসুদ রানা, যুগ্ম আইটি সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান মুন্না, আইন সম্পাদক মুহম্মদ শাহাদাৎ হোসাইন, মুখ্য কল্যাণ ও উন্নয়ন সম্পাদক সাব্বির আহমেদ তাফসীর, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম কামরুজ্জামান, যুগ্ম আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. ফরহাদ আলম।
এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাহী সদস্য হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ফাতিমা খাতুন, সখিনা খাতুন, ড. সিরাজুম মুনীরা, শাহানারা বেগম ও শারমিন আকতার।
ভোটের মাধ্যমে বাকি ২৪টির ২৩টি পদের নির্বাচিত প্রার্থীরা হলেন- সহসভাপতি মো. মতিউর রহমান আকন্দ ও মো. কেরামত আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলাওয়ার হোসেন ও মো. কামরুল আহসান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. শামসুজ্জোহা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ড. মো. হারুন-অর রশিদ, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক এবং কল্যাণ ও উন্নয়ন সম্পাদক ড. শাহ হোসাইন আহমদ মেহদী।
সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন- মো. রফিকুল ইসলাম, মো. রেজাউল করিম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মো. নূরুল ইসলাম, মো. আশফাকুর রহমান, আ.স.ম. খায়েরুজ্জামান, এম উমার আলী, মো. আবু তালেব, মো. মাহবুবুল আহসান, মো. আব্দুল বাছেদ, মো. মহিউদ্দীন, মো. শফিকুল ইসলাম, মোহা. লতিফুর রহমান, মো. আবদুল খালেক এবং মো. গোলাম রছুল। এ ছাড়া জামায়াতপন্থিদের বাইরে যুগ্ম আইন সম্পাদক হিসেবে মো. মিল্টন হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন।
ফল ঘোষণা শেষে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের সামনে রুয়ার নতুন সভাপতি মা. রফিকুল ইসলাম খান সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশন ও অ্যাডহক কমিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এ সময় তিনি গঠনতন্ত্র মেনে রুয়াকে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এদিকে রুয়া নির্বাচনের পূর্বেই তা বর্জন করে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংগঠনটির বিএনপিপন্থি সদস্যবৃন্দ। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়ায় রুয়ার গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করা হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত এবং পুরোনো সদস্যদের বাদ দিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপিপন্থি সদস্য আসলাম রেজা বলেন, ‘রুয়া একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, এটির কাজ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ভাই বোনদের কল্যাণার্থে কাজ করা। তবে এটিকে রাজনৈতিক মোড়ক দিয়ে একটি গোষ্ঠী সংবিধান লঙ্ঘন করে নতুন ভোটার বাড়িয়ে নির্বাচন করছে। প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক সদস্যকেই নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। যা দ্বারা বোঝা যায়, এটি একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য পাতানো নির্বাচন। আওয়ামী ফ্যাসিজমে আমরা যেমন ডামি নির্বাচন, রাতের নির্বাচন দেখেছি, ঠিক সেভাবেই আজ রুয়া নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে। এটিকে কোনোভাবেই এক্সক্লুসিভ, গ্রহণযোগ্য এবং সর্বজনীন নির্বাচন বলার সুযোগ প্রশাসন রাখেনি।’
তবে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে রাবি উপাচার্য ও রুয়া নির্বাচন কমিশনের সভাপতি সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর একটি কার্যকর রুয়া গঠনের পথে আমরা এগোচ্ছি। নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে। সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ ডাহা মিথ্যা; কোথায় লঙ্ঘন হয়েছে, তা যারা অভিযোগ করছেন, তারাই প্রমাণ করুক।’
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনদের সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (রুয়া)। একটি নির্বাহী কমিটি দিয়েই এতদিন সংগঠনটি চলছিল। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে রুয়ার জীবন সদস্য রয়েছেন ৮২৭৫ জন।
Leave a Reply