আপনার কিডনি প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে এই ১টি অভ্যাসে – এখনই জেনে নিন!

আমাদের কিডনি মানবদেহের দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন করে, বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল শরীর থেকে বের করে দেয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হরমোন উৎপাদন করে। অথচ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি খুব সাধারণ অভ্যাসই অজান্তেই এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে প্রতিদিন ধ্বংস করে চলেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই অভ্যাসটি এতটাই ব্যাপক যে, অনেকেই এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন নন। আর সেই অভ্যাসটি হলো: অপর্যাপ্ত পানি পান করা।

আমরা প্রায়শই ব্যস্ততার অজুহাতে বা কেবল ভুলে যাওয়ার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করি না। এই সাধারণ অবহেলাই আপনার কিডনির জন্য একটি ‘নীরব ঘাতক’ হয়ে উঠতে পারে।

অপর্যাপ্ত পানি পান করা কেন কিডনির জন্য এত বিপজ্জনক?
১. বিষাক্ত পদার্থ জমিয়ে রাখা: কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ এবং বর্জ্য অপসারণ করা। পর্যাপ্ত পানি ছাড়া কিডনি এই কাজ দক্ষতার সাথে করতে পারে না। যখন শরীর ডিহাইড্রেটেড থাকে, তখন কিডনিকে কম পানি দিয়ে বেশি কাজ করতে হয়, ফলে বর্জ্য পদার্থ রক্তে জমা হতে শুরু করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

২. কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি: পর্যাপ্ত পানি পান করলে প্রস্রাব পাতলা থাকে এবং এতে খনিজ পদার্থ ও লবণ জমাট বাঁধার সম্ভাবনা কমে যায়। কিন্তু যখন শরীর ডিহাইড্রেটেড থাকে, তখন প্রস্রাব ঘন হয়ে যায় এবং ক্যালসিয়াম ও ইউরিক অ্যাসিডের মতো খনিজগুলো স্ফটিক আকারে জমা হতে শুরু করে, যা কিডনিতে পাথর তৈরি করে। কিডনিতে পাথর অত্যন্ত বেদনাদায়ক হতে পারে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে পারে।

৩. রক্তচাপের ওপর প্রভাব: শরীর ডিহাইড্রেটেড হলে রক্ত ঘন হয়ে যায়, যা হৃদপিণ্ডের জন্য রক্ত পাম্প করা কঠিন করে তোলে। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ, কারণ এটি কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৪. কিডনি টিস্যুর ক্ষতি: যখন কিডনি পর্যাপ্ত পানি পায় না, তখন এটি শুষ্ক হয়ে যায় এবং এর টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। দীর্ঘস্থায়ী ডিহাইড্রেশন কিডনি কোষগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তাদের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

৫. মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI) এর ঝুঁকি: পর্যাপ্ত পানি পান করলে ব্যাকটেরিয়া প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু কম পানি পান করলে ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে বেশি সময় ধরে থাকতে পারে এবং সংক্রমণ ঘটাতে পারে। বারবার মূত্রনালীর সংক্রমণ কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আপনার কিডনিকে সুরক্ষিত রাখতে কী করবেন?
এই নীরব ঘাতক অভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে খুব বেশি কঠিন কিছু করার প্রয়োজন নেই, শুধু কিছু ছোট পরিবর্তন আপনার কিডনিকে বাঁচাতে পারে:

পর্যাপ্ত পানি পান করুন: প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস (২-৩ লিটার) বিশুদ্ধ পানি পান করার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আবহাওয়া গরম থাকলে বা শারীরিক পরিশ্রম বেশি হলে আরও বেশি পানি পান করা উচিত।

সকালে শুরু করুন পানি দিয়ে: সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক বা দুই গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনার শরীরকে দ্রুত হাইড্রেটেড করবে এবং দিনভর পানি পানের অভ্যাসকে উৎসাহিত করবে।

সবসময় বোতলে পানি রাখুন: কাজের সময় বা ভ্রমণের সময় আপনার সাথে একটি পানির বোতল রাখুন এবং নিয়মিত পান করুন। এটি আপনাকে পানি পানের কথা মনে করিয়ে দেবে।

ফলের রস বা চিনিযুক্ত পানীয় পরিহার করুন: এসব পানীয়তে প্রচুর চিনি থাকে যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। পরিবর্তে সাধারণ পানি বা লেবু পানি বেছে নিন।

ফল ও সবজি খান: তরমুজ, শসা, কমলা, স্ট্রবেরির মতো পানি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি আপনার শরীরে পানির চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে।

মনে রাখবেন, আপনার কিডনিকে সুস্থ রাখতে হলে পর্যাপ্ত পানি পান করার কোনো বিকল্প নেই। এই ছোট অভ্যাসটি আপনার কিডনিকে সুরক্ষিত রাখবে এবং আপনাকে একটি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন উপহার দেবে। আপনার কিডনিকে ভালোবাসুন, কারণ এটি আপনার শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিল্টার।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*