
জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি এবং তার বাবা, মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গত বছরের ‘জুলাই বিপ্লব’ তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (২৫ আগস্ট) রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে, একই মামলায় ১৭ আগস্ট গুলশান থেকে তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় আফ্রিদি ১১ নম্বর এবং তার বাবা ২২ নম্বর আসামি। পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আফ্রিদির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
তৌহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি জুলাই আন্দোলনের সময় আন্দোলন দমন এবং সরকারের পক্ষে প্রচারমূলক কনটেন্ট তৈরি করেছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি সমমনা কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন এবং যারা তার সাথে একমত হননি, তাদের অনেকে হয়রানির শিকার হন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর দাবি, আফ্রিদি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পোশাক খুলে ভিডিও করে জিম্মি করতেন। এছাড়াও, সাবেক বিতর্কিত ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ ও ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, এবং সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
আফ্রিদির গ্রেপ্তারের পরপরই ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর একটি ফেসবুক লাইভে এসে এই ঘটনাকে ‘মাইটিভি দখলের ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দেন। তিনি দাবি করেন, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মাইটিভির ৫০% শেয়ার দাবি করেছিলেন, যা না পাওয়ায় প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে এই গ্রেপ্তার করানো হয়েছে।
নুর প্রশ্ন তোলেন, “এক বছর আগের একটি মামলায় এখন হঠাৎ কেন গ্রেপ্তার? এমনকি মামলার বাদীও জানেন না কাকে আসামি করা হয়েছে।”
নুরের অবস্থান ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, একজন ছাত্র আন্দোলনের নেতা হয়ে গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত এবং সাবেক সরকারের প্রচারণাকারীর পক্ষ নেওয়া নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “নুরের এমন অবস্থান জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এটি হয়তো তার নিজের ওপর থেকে রাজনৈতিক চাপ সরানোর একটি কৌশল হতে পারে।”
তানভীর রাহী নামের এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি দাবি করেছেন, তৌহিদ আফ্রিদি তাকে ভিডিও কলে ভিপি নুরের সঙ্গে কথা বলিয়েছিলেন এবং এরপর সতর্ক করে দিয়েছিলেন তার ‘উপরের মহলের’ সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে।
নুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে পারে এবং পুরোনো কর্তৃত্ববাদী গোষ্ঠীকে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নুরের এমন সরাসরি অবস্থান তার রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
Leave a Reply