
রাত গড়িয়েছে, শরীর ক্লান্ত, কিন্তু ঘুমের কোনও নামগন্ধ নেই—এ দৃশ্য আজকাল বহু মানুষের কাছে নিত্যদিনের ঘটনা। বিছানায় শোয়ার পর বারবার পাশ পরিবর্তন, ঘুরন্ত পাখার দিকে তাকিয়ে থাকা, শেষমেশ মোবাইলের পর্দায় স্ক্রল করতে করতে রাত কাটিয়ে দেওয়া—অনিদ্রার এই চক্র থেকে বের হতে পারছেন না অনেকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক জীবনযাত্রা, মানসিক চাপ এবং ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের অতিরিক্ত ব্যবহার ঘুমের স্বাভাবিক চক্রকে নষ্ট করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক অশান্তি এমনকি অ্যালঝাইমার্স বা পার্কিনসন্সের মতো স্নায়বিক রোগ। ফলাফল—ঘুম কমে যাওয়া, ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব এবং দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
তবে কিছু সহজ জীবনধারার পরিবর্তন অনিদ্রা দূর করে এনে দিতে পারে গভীর, প্রশান্ত ঘুম।
গভীর ঘুমের জন্য যে নিয়মগুলো মেনে চলবেন
১. বালিশ ও বিছানা পরিষ্কার রাখুন
সপ্তাহে অন্তত একবার বালিশের কভার ও বিছানার চাদর পরিবর্তন করুন। ধুলো, ঘাম ও জীবাণুমুক্ত পরিষ্কার বিছানা শুধু স্বাস্থ্যকর নয়, মস্তিষ্ককে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে।
২. বিকেলের পর ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন
চা, কফি, এনার্জি ড্রিঙ্ক কিংবা কোল্ড ড্রিঙ্কে থাকা ক্যাফেইন শরীরে দীর্ঘসময় সক্রিয় থাকে এবং ঘুমের সময় স্নায়ুকে চাঙ্গা করে রাখে। বিকেল ৩টার পর এসব পানীয় থেকে দূরে থাকুন।
৩. ঘুমের আগে হালকা খাবার খান
রাতে ভারী, তেল-ঝাল খাবার হজমে বেশি সময় নেয়, যা পেটের অস্বস্তি তৈরি করে এবং গভীর ঘুমে বাধা দেয়। শোয়ার অন্তত ২–৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। পরে ক্ষুধা পেলে ফল বা বাদাম খেতে পারেন।
৪. স্ক্রিন টাইম কমান
মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপের নীল আলো মেলাটোনিন হরমোন কমিয়ে দেয়, যা ঘুমের জন্য অপরিহার্য। ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন বন্ধ করুন। এর পরিবর্তে বই পড়া, হালকা গান শোনা বা ধ্যান করার অভ্যাস করুন।
৫. নিয়মিত ঘুমের রুটিন তৈরি করুন
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগা শরীরের জৈব ঘড়িকে (সার্কাডিয়ান রিদম) ঠিক রাখে। ঘুমানোর আগে গরম জলে স্নান, ডায়েরি লেখা বা ধীর সঙ্গীত শোনার মতো রিল্যাক্সিং রুটিন মস্তিষ্ককে জানিয়ে দেয় যে ‘এখন বিশ্রামের সময়’।
৬. ঘর অন্ধকার ও নিরিবিলি রাখুন
ঘুমের ঘরে সব লাইট নিভিয়ে রাখুন এবং বাইরের শব্দ এড়ানোর চেষ্টা করুন। গদি যেন খুব নরম বা শক্ত না হয়, তা খেয়াল রাখুন। সঠিক তাপমাত্রা ও আরামদায়ক পরিবেশ দ্রুত ঘুম আনতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, ঘুম শুধুমাত্র বিশ্রাম নয়—এটি শরীর ও মনের মেরামতের সময়। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না হলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। তাই আজ থেকেই নিয়মগুলো মেনে চলুন, আর বিছানায় শুলেই ঘুম আসবে সহজে।
Leave a Reply