সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করে ১৭০ টাকা মজুরি পায় শিশু সামিউল

গত রোববার (৬ ফেব্রয়ারি) বিকেলে জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ঘোড়াবান্দা-চৌরাস্তা মোড়ে মাওয়া-মনি মিষ্টান্ন ভান্ডারে দেখা মিললো দশ বছরের শিশু সামিউলের।

সাধারণত এবয়সে লেখাপড়া-খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা থাকলেও অভাবের তাড়নায় জীবন সংগ্রামে নামতে হয়েছে তাকে। তীব্র শীতের মধ্যে সকাল ৬ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শ্রমবিক্রি করছে পঞ্চম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী। দিনমজুর বাবার ছয় সদস্যের টানাপোড়নের সংসারে কিছুটা আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যে টানা পনের ঘন্টা নানা কাজ কাজ করছে শিশুটি। দিনশেষে পারিশ্রমিক মিলছে ১৭০ টাকা।

নীল রঙের একটি গেঞ্জি গায়ে ব্যস্ত সময় পার করছে সামিউল। খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি তার কার্যতালিকায় রয়েছে টেবিল পরিষ্কার, টিউবওয়েল চেপে পানি তোলা, কাচের গ্লাস পরিষ্কার-পানি সরবরাহ। এরমাঝে সময় পেলে চায়ের কেতলি হাতে চা বানিয়ে ক্রেতার টেবিলে পৌঁছে দিচ্ছে শিশুটি।

শিশু সামিউল মনোহরপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলামের ছেলে। তার মায়ের নাম মুন্নি বেগম। কর্মস্থলের সামনেই ঘোড়াবান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে শিশুটি। ছোট ভাই মামুন একই বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণি ও ছোট দুই বোনের একটি প্রথম এবং অপরটি শিশু শ্রেণিতে পড়ছে।

সামিউল জানান, তার বাবা একজন দিনমজুর। অন্যের জমিতে দিনভর কাজ করে ৩৫০ টাকা মজুরি পান। তা দিয়ে তাদের ছয় সদস্যের সংসার চলে না। সে কারণে হোটেলে কাজ নিয়েছে শিশুটি। সকাল ৬ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ডিউটি। মালিক তিন বেলা খাবার সহ ১৭০ টাকা দেন। ওই টাকা বাবার হাতে তুলে দেই। এতে বাবা-মা অনেক খুশি হন।

সামিউলের বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে ৩৫০ টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে তিন বেলা ভালো খাবার তুলে দিতে পারি না। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায় তাদের ভালো কাপড় কিনে দিতে পারি না। সে কারণে ছোট হলেও বাড়তি আয়ের দিকে দেখে লেখাপড়ায় ক্ষতি হবে জেনেও ছেলেকে হোটেলে কাজ করতে বাধা দেই না। সকাল ৬ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত কাজ করে ১৭০ টাকা পায়। তা দিয়ে সে সংসারের হাল ধরেছে। করোনা কালে স্কুল বন্ধ রয়েছে, স্কুল খুললে সামিউল নিয়মিত স্কুলে যাবে।

উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান জানান, তীব্র শীত উপেক্ষা করে দশ বছরের একটি শিশুর টানা পনের ঘণ্টা শ্রম বিক্রির বিষয়টি অমানবিক। এতে শিশুটির পরিবার সাময়িক সুবিধা পেলেও সামিউলের ভবিষ্যত নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। এলাকার বিত্তবান-জনপ্রতিনিধিদের উচিত পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*