ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগেই কার্যত নির্বাচনি ট্রেন ছুটতে শুরু করেছে। আর সেই ট্রেন ধরতেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ এখন তুঙ্গে। দলীয় মনোনয়ন পেতে কেউ কেউ আগেই ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন, আবার কেউ হাইকমান্ডের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পুরোদমে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে ঘেরা। ভোট হবে সুষ্ঠু ও অবাধ—এই আশাবাদের ভিত্তিতে ভোটারদের কদরও থাকবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা এবার প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছেন, যা নির্বাচনের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।
এদিকে বিএনপি নির্বাচন কেন্দ্রিক জরিপে ব্যস্ত সময় পার করছে। ইতিমধ্যে দুটি জরিপ শেষ হয়েছে, চলছে তৃতীয় পর্যায়ের জরিপ। এর মাধ্যমে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মদক্ষতা যাচাই করা হচ্ছে। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রার্থিতা বাছাইয়ে সবচেয়ে বড় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আন্দোলনে ভূমিকা রাখা, সততা, জনসম্পৃক্ততা এবং তরুণদের আকর্ষণের মতো দিকগুলোকে।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জনের প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত বলে জানা গেছে। অন্যদিকে আন্দোলনকালীন শরিক দলগুলোকে সম্মান জানিয়ে কিছু আসন ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছে দলটি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রার্থীরা ইতিমধ্যে তাদের নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন এবং গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে জনগণের মতামত গ্রহণকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সঠিক প্রার্থী নির্বাচন করা। কারণ ভুল প্রার্থী নির্বাচন করলে জনগণের মন জয় করা কঠিন হয়ে পড়বে। আর এক্ষেত্রে তরুণ ও আন্দোলনে সক্রিয় নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হলে দলকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। শুধু জনপ্রিয়তা নয়, প্রার্থীদের নেতৃত্বগুণ, রাজনৈতিক ভিশন এবং মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতাও এবার বড় ভূমিকা রাখবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেক বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে। তাই প্রচারণার ধরন বদলাবে এবং শুধু ব্যানার-ফেস্টুন নির্ভর প্রচারে আর ভোট পাওয়া যাবে না। প্রার্থীদের হতে হবে বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত, কর্মক্ষম এবং তরুণ সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করার উপযুক্ত।
পরিশেষে, বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এবার দলীয় মনোনয়ন দিতে গিয়ে অতীতের সব ভুল সংশোধন করার চেষ্টা করা হবে। প্রার্থী হবেন জনসম্পৃক্ত, গ্রহণযোগ্য, নির্ভীক এবং আন্দোলনের পরীক্ষিত সৈনিক—যার নেতৃত্বে জনগণ আশাবাদী হতে পারে।
Leave a Reply