এবার শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা!

গত বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই চলছিল একের পর এক ষড়যন্ত্র। নানামুখী অপতৎপরতার মাধ্যমে নতুন সরকারকে ব্যর্থ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল পরাজিত শক্তি। সব ধরনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কার্যত নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ। এবার তাদের টার্গেট বড় ধরনের হামলা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা।

এবার আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শেখরের নির্দেশে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কীভাবে ঘটাবে, ঘটনার পর কীভাবে পালাবে, শেখ হাসিনাকে কীভাবে দেশে ফিরিয়ে আনবে, জনসমাগম কোথায় ঘটাবে-প্রভৃতি বিষয় নিয়ে এরই মধ্যে একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন করেছে কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। ৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে ওই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়। সেখানে অংশ নেন ৪০০ নেতাকর্মী। নির্দেশদাতা শেখর এবং নাছিম বিদেশে পলাতক থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল রানা ও শামীমা নাসরিন শম্পার নেতৃত্বে নাশকতার ছক হচ্ছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল শাহবাগে বসার।

এছাড়া ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনাও তাদের ছিল। পরিকল্পনায় যুক্ত শম্পা, সোহেল রানাসহ ঢাকা থেকে ১৪ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেফতার করার পর দুই দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সারা দেশে আরও বেশকিছু গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের সূত্র যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, কনভেনশন হলটি বুকিং করেন শামীমা নাসরিন শম্পা। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে তিনি ভাড়া নেন কনভেনশন হল। ভাড়া নেওয়ার সময় বলা হয়, তারা বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করবেন। এজন্য কিছু লোককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড হলেন সোহেল রানা। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাড়ি বরগুনায়।

সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগ দেন সারা দেশ থেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ৪০০ জন নেতাকর্মী। রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করার সময় একেক জন ব্যবহার করেন একেক ছদ্মনাম। কারও পরিচয় দেওয়া হয় রাজমিস্ত্রি, কেউ কার্পেন্টার, কাউকে বানানো হয় বাগান পরিচর্যাকারী বা অন্যান্য শ্রমজীবী।

কনভেনশন হলের ম্যানেজার আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিকল্পনার কথা জানলেও হলের অন্য স্টাফরা কিছু জানতেন না। তবে মামলা হওয়ার পর পুলিশ যখন তদন্তে যায়, তখন সবাই জানতে পারেন সবকিছু। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। সবার আগে তথ্য পায় এনএসআই এবং এসবি। এ দুইটি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শম্পা ও সোহেল রানাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় রাজধানীর ভাটারা থানায়।

প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলীয় নেতাকর্মীদের কার্যক্রম গতিশীল করা, রাজপথে নামা, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য তারা কোথায় বসবে, কে কতজন লোক আনবে, কোথায় কীভাবে আত্মগোপনে লুকিয়ে থাকবে, নিজেদের কথোপকথন কীভাবে হবে, দলীয় জনসমর্থন বাড়ানো এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনাসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে যে কোনোদিন হামলা হতে পরে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা। তাই এই ১১ দিনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী যুগান্তরকে বলেন, পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির অপতৎপরতার পরিকল্পনা আমরা জেনেছি। সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। মূল হোতাসহ ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। আশা করছি, তারা সফল হতে পারবে না।

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত এই ১১ দিন যে নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। কোনো ফ্যাসিবাদী চক্রের স্থান ঢাকা রেঞ্জে হবে না। ঢাকা রেঞ্জের যেখানেই ফ্যাসিস্টরা লুকিয়ে থাকুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে সব জেলার এসপিকে আমি কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি।- সূত্র : যুগান্তর

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*