জন্ম নিবন্ধন করতে হয় কীভাবে, কী কী লাগে?

স্কুলে ভর্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, পাসপোর্ট তৈরিসহ মোট ১৯টি সেবা পেতে জাতীয় জন্ম সনদ প্রয়োজন হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– সরকারি বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার তালিকা, জমি রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, আমদানি-রপ্তানি, লাইসেন্স ইস্যু, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ, টেলিফোন সংযোগগ্রহণ, বাড়ির নকশার অনুমোদন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু।

জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কার্যক্রম অফলাইনে হলেও বর্তমানে সরকারি ডাটাবেসে নাগরিকদের তথ্য সংরক্ষণের স্বার্থে অনলাইনের মাধ্যমে তথ্য নেওয়া হচ্ছে।

জন্ম নিবন্ধন সনদ একজন ব্যক্তির বাংলাদেশের নাগরিকত্বের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। একজন নাগরিকের তথ্য আইনগতভাবে সরকারি খাতায় লিপিবদ্ধ করাকে জন্ম নিবন্ধন বলা হয়। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ অনুসারে প্রত্যেক বাংলাদেশি নাগরিকের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।

নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন

অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার জন্য https://bdris.gov.bd/br/application লিংকে গিয়ে যে ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করবেন তাতে টিক-মার্ক চিহ্ন দিয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। তারপর জন্ম নিবন্ধন ফরমে নাম, জন্ম তারিখ, পিতা-মাতার নাম ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে।

আবেদনের জন্য প্রথমে ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে। যার জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করা হবে তার নাম বাংলায় ও ইংরেজিতে লিখতে হবে। তারপর জন্ম তারিখের ঘরে জন্ম তারিখ dd-mm-yyyy ফরমেটে দিতে হবে।

পিতা-মাতার কততম সন্তান, সেটির ক্রমিক নম্বর বাছাই করে দিতে হবে। পুরুষ না মহিলা লিঙ্গ সেটি লিখতে হবে। তারপর জন্মস্থানের ঠিকানা সঠিকভাবে লিখে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।

১. অনলাইনে আবেদন করা ফর্মের প্রিন্ট কপি
২. শিশুর এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৩. শিশুর ইপিআই (এক্সপান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশন) টিকা কার্ড কিংবা ইপিআই কর্মীর কাছ থেকে নেওয়া প্রত্যয়নপত্র
৪. শিশুর জন্মস্থান ও জন্ম তারিখের প্রমাণপত্র হিসেবে হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে শিশুর জন্ম সনদের সত্যায়িত অনুলিপি বা বার্থ এটেনডেন্টের প্রত্যয়নপত্র বা শিশুর জন্ম সংক্রান্ত অন্য কোনো প্রমাণপত্র
৫. বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষাতেই বাবা-মায়ের অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদ
৬. বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র
৭. শিশুর যেকোনো একজন অভিভাবকের কর পরিশোধের প্রমাণ

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

বর্তমানে হাতে লিখে ফরম পূরণের মাধ্যমে আর জন্ম নিবন্ধনের আবেদন নেওয়া হয় না। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে সেটি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নিকটস্থ স্থানীয় সরকারের কার্যালয়ে জমা দিতে হয়।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে প্রথমে যেতে হবে বাংলাদেশ সরকারের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ওয়েবসাইটে।

প্রথম স্ক্রিনে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহের জন্য স্থানীয় সরকারের অফিস নির্বাচন করতে হবে। প্রার্থী তার নিজের জন্মস্থান, স্থায়ী ঠিকানা অথবা বর্তমান ঠিকানা থেকে সনদ নিতে পারবে।

এরপরের ধাপে প্রার্থীর নাম-ঠিকানা ও বাবা-মায়ের তথ্য দিতে হবে। প্রার্থীর জন্ম ২০০১-এর আগে হলে শুধু বাবা-মায়ের নাম দিলেই হবে। অন্যথায় বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিতে হবে।

সবশেষে প্রার্থীর ফোন নম্বর দিতে হবে যেখানে জন্ম সনদের আবেদন সংক্রান্ত বার্তা আসবে।

অনলাইন আবেদন সম্পন্ন হলে প্রাপ্ত আবেদনপত্রটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হবে। পরে এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সংযুক্ত করে নিকটস্থ স্থানীয় সরকারের কার্যালয়ে সর্বোচ্চ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন ফিসহ জমা দিতে হবে।

জমা দেওয়ার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিস কপি রেখে একটি গ্রাহক কপি দেবেন। এরপর মোবাইলে জন্ম সনদ নিশ্চিতকরণ বার্তা এলে সনদ নেওয়ার দিন গ্রাহক কপিটি সঙ্গে নিতে হবে।

অনলাইন আবেদন শেষ করার পর একটি অ্যাপ্লিকেশন আইডি দেওয়া হয়। এই আইডি ও প্রার্থীর জন্ম তারিখ ব্যবহার করে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদনের চলমান অবস্থা জানা যাবে।

জন্ম নিবন্ধন ফি

৪৫ দিন বয়সী শিশুর জন্ম নিবন্ধন বিনামূল্যে করা যাবে। ৪৬ দিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের ফি ২৫ টাকা। দেশের বাইরে থেকে জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ফি ১ মার্কিন ডলার। জন্ম সনদ সংশোধন ফি ১০০ টাকা। দেশের বাইরের প্রার্থীদের জন্য ২ মার্কিন ডলার। বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষাতেই মূল সনদ পেতে বা তথ্য সংশোধনের পর সনদের কপি সম্পূর্ণ ফ্রিতেই পাওয়া যাবে। কিন্তু বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষাতেই জন্ম নিবন্ধন সনদের নকল পেতে ৫০ টাকা এবং দেশের বাইরের প্রার্থীদেরকে ১ মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে।

বয়স ৫ বছরের বেশি হলে

৫ বছরের বেশি বয়সের কারো জন্ম নিবন্ধন করতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট, পিতা-মাতার স্থানীয় ঠিকানার কর পরিশোধের রশিদ, অথবা জমি বা বাড়ি ক্রয় করার দলীল বা খাজনা দেওয়ার রশিদ প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া পিতা ও মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কপি (যদি থাকে), পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (যদি থাকে)। আর বয়স প্রমাণের জন্য চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্বীকৃত এমবিবিএস বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী) লাগবে।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত পুরাতন ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর অফিসের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ নেওয়া যাবে। তারা আগের মতোই জন্ম-মৃত্যু রেজিস্টার জেনারেল কার্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৭ থেকে ৫৪ নম্বর পর্যন্ত ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলরদের সচিবের পদ শূন্য থাকায় সেখানে নিবন্ধক এখনো দেওয়া হয়নি। তাই এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের তাদের সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের জন্য সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কার্যালয়ে যেতে হচ্ছে।

অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বাসিন্দারা ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন করাতে পারছেন। ওয়ার্ড অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে আগ্রহী ব্যক্তিকে জন্ম নিবন্ধনের কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*