পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্কের কথা বলে বাসায় ডেকে আনে। এরপর টাকা না দিয়ে মোবাইলে শারীরিক সম্পর্কের ধারণ করা ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা চাকু দিয়ে কারখানার কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে গলা ও উরুতে আঘাত করে হত্যা করে। হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বুধবার (২৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় পিবিআই পুলিশ সুপার (এসপি) আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত দেড়টায় গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার কুনিয়া মোতালেব মার্কেট এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন বগুড়া জেলা সদর থানার মৃত খলিল শেখের ছেলে নয়ন (২১) ও একই জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার মানিকদারচর (টেংরাকুরা) গ্রামের এরশাদ আলীর ছেলে আল আমিন (১৯)। আসামিরা গাছা থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
নিহত রফিকুল ইসলাম (৪৮) টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের আব্দুর রশিদ মিয়ার ছেলে। তিনি কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ এলাকায় মাসুদের মালিকানাধীন পাঁচতলা বাড়ির চার তলায় প্রায় ৬/৭ বছর ধরে সপরিবারে ভাড়া থাকতেন। গাজীপুর ফিড মিল লিমিটেড কারখানায় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই গাজীপুরের এসআই সনজিৎ বিশ্বাস জানান, রফিকুল ইসলামের ছেলে রাতুল আহামেদ তার মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামে যান। রবিবার (২০ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে রাতুল আহামেদ তার বাবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে না পেয়ে তার দুই বন্ধুকে তাদের বাসায় পাঠায়। তারা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাসায় গিয়ে দেখেন বাইরে থেকে তালা দেওয়া। পরে বাড়ির মালিককে ডেকে দরজার তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে রফিকুলকে মৃত অবস্থায় খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখেন।
তিনি জানান, এ সময় ঘরের আলমারির ড্রয়ার খোলা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এলোমেলোভাবে পড়ে ছিল। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ছেলে রাতুল আহামেদ বাদী হয়ে জিএমপির কোনাবাড়ী থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পিবিআই গাজীপুর মামলার দায়িত্ব পেয়ে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়ে নয়ন ও আল আমিনকে গ্রেফতার করে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করে রফিকুল ইসলাম তাদেরকে শারীরিক সম্পর্ক করার কথা বলে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া করে নিয়ে যান। শারীরিক সম্পর্ক শেষে না টাকা দিয়ে উল্টো গোপনে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা চাকু দিয়ে ভুক্তভোগীর গলা ও উরুতে আঘাত করে হত্যা করে। পরে তারা ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু ও মোবাইল ফোন স্থানীয় কড্ডা ব্রিজের কাছে ফেলে দেয়।
পিবিআই গাজীপুরের এসপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। শারীরিক সম্পর্কের কথা বলে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া করে বাসায় ডেকে নিয়ে আসার পর টাকা না দিয়ে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও মোবাইলে গোপনে ধারণ করে ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা চাকু দিয়ে কারখানা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। আসামিরা হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, রবিবার বিকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থানার আমবাগ (মধ্যপাড়ার) মাসুদের মালিকানাধীন পাঁচতলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটের তালাবদ্ধ ঘর থেকে পুলিশ রফিকুলের লাশ উদ্ধার করে।
Leave a Reply