
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতো আজ সোমবার (২১ জুলাই) ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছিল। কিন্তু দুপুর ১টার দিকে মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে স্তব্ধ হয়ে যায় কোলাহল, ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার আর হতাহতদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠে বাতাস। পুরো এলাকায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, স্বজনদের ছোটাছুটি, আহাজারিতে শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। বীভৎস এই পরিস্থিতি থেকে মাইলস্টোন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ইউসাকে উদ্ধার করে আনেন তার ভাই রোহান, যিনি একই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে বোন ইউসাকে ভর্তি করে দিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রোহান। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি তখন কলেজে ক্লাসে ছিলাম। ওর ছুটি (ইউসা) হয় ১টায়। আমার ছুটি ১টা ৪০ মিনিটে। কিন্তু যখন বিমান বিধ্বস্ত হয়, তখন আমি আমার বোনকে খুঁজতে শুরু করি। কিন্তু আমি তাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি যখন (ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে) যাই, তখন দেখি ছোট ছোট বাচ্চারা দুই ভাগ হয়ে আছে, গার্ডিয়ানরা (অভিভাবক) দুই ভাগ হয়ে আছে। অর্ধেক আছে, বাকি অর্ধেক নাই। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম, আমার বোনকে পাচ্ছিলাম না। আমি এদিক-সেদিক দৌড়াচ্ছিলাম। অনেকে ভবনের উপর থেকে ভাঙার চেষ্টা করতেছিল, ভেতরে আগুন জ্বলতেছিল। একপর্যায়ে আমি দেখি, আমার বোন ক্যান্টিনে দাঁড়িয়ে আছে, সে কান্না করতেছিল। ওর হাতে ফোসকা পড়েছে, মাথায় আঘাত লেগেছে। এরপর আমি তাকে উদ্ধার করে (স্থানীয়) হাসপাতালে নিয়ে যাই, সেখানে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। সেখানে তারা আমাকে বলল, রোগীকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যাও। এরপর আমি আমার বোনকে বার্ন ইউনিটে আনি।’
রোহান আরও বলেন, ‘যখন বিমান বিধ্বস্ত হয়, আমি তখন ক্লাসে ছিলাম। শব্দ পেয়েছি, ভেবেছিলাম কোনো চাকার টায়ার ফেটেছে। এরপর যখন দেখি, সব শিক্ষার্থীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে, তখন বুঝতে পেরেছি প্লেন বিধ্বস্ত হয়েছে।’
রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বিমানটির পাইলটসহ কমপক্ষে ১৯ জন নিহতের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। অর্ধশতাধিক আহত ও দগ্ধকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর পরই দুপুর ১টা ৬ মিনিটের দিকে উত্তরার মাইলস্টোনে স্কুল এন্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনের ওপর বিমানটি আছড়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেন।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক শোক বার্তায় তা জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
Leave a Reply