
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী— এখন পর্যন্ত একজন নিহত হওয়ার খবর তারা নিশ্চিত করতে পেরেছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সোমবার (২১ জুলাই) উত্তরার আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, আহতদের নিয়ে হাসপাতালে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসছে। কখনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অ্যাম্বুলেন্সে করে, আবার কখনো অন্য প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্সে করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা হচ্ছে হাসপাতালটিতে। প্রায় দশ মিনিট পর পর এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
এ ঘটনা মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্সে করে আসছে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা। এর সঙ্গে অভিভাবকরা এসে হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে মেডিকেল কলেজটির শিক্ষার্থীরাও জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়েছেন এবং তারা সড়ক ক্লিয়ার রাখছেন, যেন অ্যাম্বুলেন্স ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
একের পর এক এই অ্যাম্বুলেন্স আসা দেখে জরুরি বিভাগের সামনে উপস্থিত সবাই হতভম্ব। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ভেতরে আরও অনেক আহত রয়েছে। যাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা যাচ্ছে না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে যারা আসছেন, তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর যাদের আঘাত এত গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাদেরকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ব্যাগে করে একটি মরদহ আনা হয়।
সোমবার দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল বলে জানা গেছে। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়েছে।
দুর্ঘটনার পরপর উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। উত্তরাসহ আশপাশের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধার করা শুরু করে। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় দগ্ধ অন্তত ৫০ জনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। যারা সবাই গুরুতর দগ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া, উত্তরা এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে আরও বহু দগ্ধ ও আহত শিক্ষার্থী ভর্তি আছে। দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা কত তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে দুপুর ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। দুপুর ১টা ৬ মিনিটে এটি উড্ডয়ন করে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি উত্তরা মাইলস্টোন কলেজের ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটির পাইলট ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শোক বার্তায় তিনি বলেন, বিমান বাহিনীর এফ-৭বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ। আমি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সকল কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ প্রদান করছি।
Leave a Reply