আগামী বছর থেকে হজে যেতে পারবেন না যারা

আগামী বছর থেকে সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থার ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া সৌদি আরবে যেতে পারবেন না বাংলাদেশি হজযাত্রীরা। কিডনি, ক্যান্সারসহ জটিল রোগ নিয়ে হজ পালন করতে গিয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। এ কারণে যথাযথ ফিটনেস পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি সরকার।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) বলছে, প্রাক নিবন্ধনের আগেই সারতে হবে স্বাস্থ্য যাচাই প্রক্রিয়া। চলতি বছর ৮৭ হাজার হাজির মধ্যে ৬৯ হাজার জন বাংলাদেশি সৌদি আরবে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

ষাটোর্ধ্ব রিনা আনোয়ার ছেলেকে নিয়ে পবিত্র হজ পালনে গিয়েছিলেন সৌদি আরব। হজের আনুষ্ঠানিকতা যখন শেষ পর্যায়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। জ্বরের পাশাপাশি কমতে থাকে অক্সিজেন লেভেল।বাংলাদেশ মিশন মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকদের পরামর্শে বৃদ্ধাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় কিং ফাহাদ হাসপাতালে। সেখানে পান বিনামূল্যে চিকিৎসা।

বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে অনেকে কিডনি, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আগে থেকেই ছিলেন আক্রান্ত। বয়সের কারণে অনেকে সেখানে গিয়ে হয়ে পড়েন অসুস্থ। ২০২৫ সালে ৮৭ হাজার হাজির মধ্যে ৬৯ হাজারজন বাংলাদেশ মিশন মেডিকেল সেন্টার থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩২৪ জন হাজিকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে।

বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিষয়টি নজরে এনেছে সৌদি সরকার। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী বছর থেকে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য লাগবে সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থার ফিটনেস সার্টিফিকেট।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, এতো হজযাত্রীর জন্য অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করা কষ্টকর। বিশেষ করে মিনা, মুজদালিফা আর আরাফায় এ ব্যবস্থা কষ্টসাধ্য। সৌদি সরকার চাচ্ছে, ভীষণ অসুস্থ রোগীদের যেন পাঠানো না হয়।

সৌদির এমন সিদ্ধান্তে কাজ শুরু করেছে ধর্মমন্ত্রণালয়। হজযাত্রীরা ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে পারবেন সিভিল সার্জন এবং সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। হজের মত পবিত্র বিষয় নিয়ে যেন বাণিজ্য না হয় সেদিকে নজর দেয়ার পরামর্শ হাবের।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম বলেন, অনেক রোগী চলে যাচ্ছে, যারা সৌদিতে গিয়েই ডায়ালাসিস করতে হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের হজ কাফেলায় সৌদি আরবে মারা গেছেন ৪২ জন বাংলাদেশি। অসুস্থ হয়ে সৌদি আরবে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি ২২ জন।

এসকে/এইচএ

ট্যাগ :

সম্পর্কিত:

কিসাসই এসব কসাইয়ের সমাধান: আহমাদুল্লাহ

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। পৈশাচিক এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কিসাসই এসব কসাইয়ের সমাধান বলে মন্তব্য করেছেন সামাজিক সাহায্য সংস্থা আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।শুক্রবার (১১ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এসব কথা লেখেন।তিনি লেখেন, কিসাস অর্থ সমপরিমাণ শাস্তি। যেভাবে যতটুকু জুলুম হবে, ঠিক সেভাবে ততটুকু প্রতিকার করা হলো কিসাস। কেন কুরআনে কিসাসের কথা বলেছে, তা আমরা দেয়ালে পিঠ ঠেকলে উপলব্ধি করতে পারি।শেষে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লেখেন, এ ধরনের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের বিচার সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে পারলে অপরাধের প্রবণতা কমে যাবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে বছরের পর বছর ধরে বিচার কাজ চললে, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার পাওয়ার পথ খোলা থাকলে এ ধরনের অপরাধ কখনো কমবে না।উল্লেখ্য, গত ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে হাসপাতালের ভেতরেই তাকে মারধর করা হয়। পরে নিথর দেহ টেনে-হিঁচড়ে মূল গেটের বাইরে এনে পাথর দিয়ে আঘাত ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।এসকে/এইচএ

চাঁদাবাজি কবিরা গুনাহ, কঠিন শাস্তি বিধান ইসলামে

চাঁদাবাজি অত্যন্ত ঘৃণিত ও গর্হিত অপরাধ। এটা একধরনের দস্যুতা। ইসলামের দৃষ্টিতে চাঁদাবাজি হারাম ও কবিরা গুনাহ। চাঁদাবাজি করা কবিরা গুনাহ। প্রভাবশালী চক্র কর্তৃক জোর করে কারো কাছ থেকে নিজের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য অথবা নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করা ইত্যাদির জন্য নির্দিষ্ট অথবা অনির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা দিতে বাধ্য করাকে সাধারণত চাঁদাবাজি বলা হয়। ডাকাতি ও দস্যুতার সঙ্গে এর মিল আছে।শান্তির ধর্ম ইসলাম বলছে, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত সবাই গুনাহগার। চাঁদা উত্তোলনকারী, চাঁদা লেখক ও চাঁদা গ্রহণকারী সবাই ওই গুনাহর সমান অংশীদার।ইসলামের বিধান, কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়াই হারাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ কোরো না এবং এ উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে এমন কোনো মামলা কোরো না যে মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনেশুনে গ্রাস করার গুনাহে লিপ্ত হবে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)রাসুল (সা.) বলেন, কোনো মুসলমানের সম্পদ তার আন্তরিক সম্মতি ছাড়া হস্তগত করলে তা হালাল হবে না। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১৬৭৫৬)চাঁদাবাজদের ৪ ধরনের শাস্তি হবে পরকালেআল্লাহর জমিনে ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপরাধে চাঁদাবাজদের ৪টি শাস্তির যেকোনো একটি শাস্তি দিতে হবে। এমন অপরাধীদের হত্যা করতে হবে অথবা ফাঁসি দিতে হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অন্য দিকের পা কেটে ফেলতে হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দি করে রাখতে হবে যতক্ষণ না তারা তাওবা করে নিজেদের শুধরে নেয়।পবিত্র কুরআনে সুরা মায়িদাহ এর ৩৩ নম্বর আয়াতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে।আল্লাহ তা’লা বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ কিংবা প্রকাশ্য শত্রুতা পোষণ করে অথবা আল্লাহ ও রাসুলের বিধি-বিধানের ওপর হঠকারিতা দেখায় এবং (হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মাধ্যমে) ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি ও ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এটাই যে তাদের হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসি দেওয়া হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অন্য দিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দি করে রাখা হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। এটা তাদের জন্য পার্থিব ভীষণ অপমান আর পরকালেও তাদের জন্য ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে…।’ (সুরা : মায়িদাহ, আয়াত : ৩৩)গুনাহ এনে চাপিয়ে দেওয়া হবেপাশাপাশি মানুষ থেকে কেড়ে নেওয়া অধিকার তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করেছে, সে যেন তার কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নেয় তার ভাইয়ের পক্ষে তার কাছ থেকে পুণ্য কেটে নেওয়ার আগেই। কারণ সেখানে (আখিরাতে) কোনো দিনার বা দিরহাম পাওয়া যাবে না। তার কাছে যদি পুণ্য না থাকে, তাহলে তার (মজলুম) ভাইয়ের গুনাহ এনে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৮৫)চাঁদা উত্তোলনকারী, ভোগকারী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সরাসরি জালিম অথবা জালিমের সহযোগী। ইহকাল ও পরকালে তারা কঠিন শাস্তির উপযোগী। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শুধু তাদের বিরুদ্ধেই (শাস্তির) ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ আচরণ করে বেড়ায়। বস্তুত তাদের জন্য আছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ৪২)এইচএ

১২ জুলাই: নামাজের সময়সূচি

আজ শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ ইংরেজি, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বাংলা, ১৬ মহররম ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো-নামাজের সময়সূচিফজর- ৩:৫৪ মিনিট।জোহর- ১২:০৮ মিনিট।আসর- ৪:৪৩ মিনিট।মাগরিব- ৬:৫৩ মিনিট।ইশা- ৮:১৮ মিনিট।আজ সূর্যাস্ত- ৬:৫০ মিনিট।আজ সূর্যোদয়- ৫:১৮ মিনিট।বিভাগীয় শহরের জন্য উল্লেখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগে সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, তা হলো-বিয়োগ করতে হবে-চট্টগ্রাম: -০৫ মিনিট।সিলেট: -০৬ মিনিট।যোগ করতে হবে-খুলনা: +০৩ মিনিট।রাজশাহী: +০৭ মিনিট।রংপুর: +০৮ মিনিট।বরিশাল: +০১ মিনিট।এইচএ

জুমার দিনে যেসব আমলে গুনাহ মাফ হয়

ইসলামে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে জুমার দিন দ্রুত মসজিদে গমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন নামাজের আজান হলে তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাবিক্রি বন্ধ কোরো, তা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝো।এরপর নামাজ শেষ হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯-১০)জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:১। জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদাআবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো—এক. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। দুই. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন। তিন. এই দিনে আদম (আ.)-কে মৃত্যু দিয়েছেন। চার. এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছুই প্রার্থনা করবে তিনি তা দেবেন। যতক্ষণ সে হারাম কিছু প্রার্থনা করবে না। পাঁচ. এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৯৫)২। জুমার নামাজ আদায়সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)।অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)। ৩। জুমার দিন গোসল করাজুমার দিন গোসল করা ও আগে আগে মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তাঁর জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)৪। মসজিদে প্রথমে প্রবেশ করাজুমার দিন মসজিদে আগে প্রবেশ করা ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার বিশেষ গুরুত্ব আছে।রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, অতঃপর প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল, এরপর যে ঢুকল সে যেন মুরগি কোরবানি করল, আর যে এরপর ঢুকল সে ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য এলে ফেরেশতারা আলোচনা শোনা শুরু করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৪১)। ৫। জুমার দিন দোয়া কবুল হয়জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আসরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১০৪৮)জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)৬। সুরা কাহাফ পাঠজুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)। ৭। গুনাহ মাফ হয়সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)৮। দরুদ পাঠজুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)।এফএস

দেশে ফিরলেন ৮২ হাজার ৪১৬ হাজি

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ফেরত আসা যাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ফিরেছেন ৫ হাজার ৮৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ফিরেছেন ৭৭ হাজার ৩২৯ জন।হজযাত্রী পরিবহনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স নামে তিনটি বিমান সংস্থা যুক্ত ছিল। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফিরিয়ে এনেছে ৩৬ হাজার ৮৩৩ জন, সৌদি এয়ারলাইন্স ২৭ হাজার ৮১ জন, ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স ১২ হাজার ১৬৯ জন এবং অন্যান্য এয়ারলাইন্সে ৬ হাজার ৩৩৩ জন হাজিকে।এ পর্যন্ত ২১৫টি ফিরতি হজ ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১০৬ ও সৌদি এয়ারলাইন্স ৭৫টি ফ্লাইট চালিয়েছে, আর ফ্লাইনাস পরিচালনা করেছে ৩৪টি ফ্লাইট।এ বছর হজ পালনের সময় সৌদি আরবে মোট ৪৪ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারী। হজ অফিসের বুলেটিনে বলা হয়েছে, মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে বার্ধক্যজনিত জটিলতা ও অসুস্থতা ছিল প্রধান।চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৭ হাজার ১৫৭ জন মুসল্লি হজে অংশ নিয়েছেন। হজযাত্রা শুরু হয় ২৯ এপ্রিল থেকে এবং শেষ ফ্লাইটটি সৌদি আরবের উদ্দেশে যায় ৩১ মে। এবারের হজ অনুষ্ঠিত হয় ৫ জুন। ফিরতি হজ ফ্লাইট আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত চলবে।এসকে/এসকে

সুদ হলো আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ

সুদ অর্থ অতিরিক্ত। সুদ শব্দটি উর্দু। আরবি প্রতিশব্দ ‘রিবা’। সুদকে ইংরেজিতে বলা হয় ইন্টারেস্ট (interest) বা ইউজারি (usury)। ‘রিবা’ অর্থ বেশি হওয়া, বৃদ্ধি পাওয়া, অতিরিক্ত, সম্প্রসারণ, মূল থেকে বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। ইসলামে সুদ হারাম হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে।আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া যা আছে সব ছেড়ে দাও, যদি তোমরা ইমানদার হয়ে থাকো। যদি তোমরা না ছাড়ো তবে আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। যদি তোমরা তওবা করো তবে মূলধন তো তোমাদেরই। এতে তোমরা অত্যাচারও করবে না, অত্যাচারিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৭৮-২৭৯)কোরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুদ হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে অভিশাপ দিয়েছেন। সুদের বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেও না। আল্লাহকে ভয় করো। তাহলে তোমরা সফল হতে পারবে।’ (সুরা: আল ইমরান, আয়াত: ১৩০)অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তোমরা যে সুদ দিয়ে থাকো আল্লাহর দৃষ্টিতে তা সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমরা যে জাকাত দিয়ে থাকো তা বৃদ্ধি করে। প্রকৃতপক্ষে জাকাত প্রদানকারীরাই সমৃদ্ধি আনে।’ (সুরা: রূম, আয়াত: ৩৯)মহানবী (সা.) সুদের শাস্তির ভয়াবহতা নিয়ে বলেন, ‘মেরাজের রাতে আমি এমন একটি দল অতিক্রম করেছি যাদের পেট ঘরের মতো (বড়)। ভেতরে অনেক সাপ। যা পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল। আমি বললাম, হে জিবরাইল! এরা কারা? তিনি উত্তর দিলেন, এরা আপনার উম্মতের সুদখোর লোক।’ (ইবনে মাজাহ ২২৭৩)নবী (সা.) আরো বলেন, ‘আমরা (আমি, জিবরাইল (আ.) ও মিকাইল (আ.) চলতে চলতে একটি রক্ত নদীর পাড়ে পৌঁছলাম। নদীর মাঝে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। তীরে দাঁড়িয়ে আছে আর এক জন। তার কাছে কিছু পাথর আছে। নদীর ভেতরের লোকটি তীরে এসে যখনই পাড়ে উঠার চেষ্টা করে তখনই তীরের লোকটি তার মুখ বরাবর পাথর ছুড়ে তাকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে দেয়। যতবার উঠার জন্য অগ্রসর হচ্ছে ততবারই মুখের ওপর পাথর ছুড়ে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমি বললাম, এ কে? তারা (জিবরাইল (আ.) ও মিকাইল (আ.) উত্তর দিলেন, নদীর ভেতরের লোকটি একজন সুদখোর।’ (বোখারি ২০৮৫)শুধু তাই নয়, রাসুল (সা.) সুদখোরকে, সুদ দাতাকে, সুদের লেখককে, সাক্ষীকে অভিশাপ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এরা সকলে সমান অপরাধী।’ (মুসলিম ৪১৭৭)‘যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, ব্যবসা তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৫) আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকাহকে বৃদ্ধি দেন। (সুরা: বাকারা, আয়াত ২৭৬)যে কারণে হারাম সুদ: শরিয়তের পরিভাষায় সুদের সংজ্ঞা হলো, একই শ্রেণিভুক্ত দুটি জিনিসের পরস্পর আদান-প্রদান করার সময় একজনের অপরজনের নিকট এমন বেশি নেয়া যাতে এ বেশি অংশের বিনিময়ে কোনো জিনিস থাকে না। (আল বুনূকুল ইসলামিয়্যাহ বাইনান নাযারিয়্যাতি অত্তাত্ববীক্ব ৪৪ পৃষ্ঠা)ফিকহে ইসলামির গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ ‘ফতোয়া আলামগিরি’তে সুদের সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছে, ‘এক মালের বদলে অন্য মালের আদান-প্রদানকালে সেই অতিরিক্ত (নেয়া) মালকে সুদ বলা হয়; যার কোন বিনিময় থাকে না।’ফিকহের আরেকটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘হেদায়া’তে সুদের সংজ্ঞা এইভাবে করা হয়েছে, ‘লেন-দেন করার সময় সেই অতিরিক্ত মালকে সুদ বলা হয়; যা কোনো একপক্ষ শর্ত অনুসারে কোনো বিনিময় ছাড়াই লাভ করে থাকে।’মূল থেকে যে পরিমাণ অংশ বেশি নেয়া বা দেয়া হবে সেটাকেই সুদ বলা হবে। সুতরাং সুদের সংজ্ঞা সহজে বলতে পারি, ঋণে দেয়া মূল অর্থের চেয়ে সময়ের বিনিময়ে যে অতিরিক্ত অর্থ শর্ত ও নির্দিষ্টরূপে নেয়া হয় তার নাম হলো সুদ।মূল অর্থ থেকে কিছু বৃদ্ধি, সময়ের দৈর্ঘ্য অনুসারে বৃদ্ধির পরিমাণ নির্ধারণ এবং এই লেন-দেনে বৃদ্ধি শর্ত হওয়া, এই তিন উপাদানে গঠিত বস্তুর নাম সুদ। আর প্রত্যেক সেই ঋণের আদান-প্রদান যার মধ্যে উক্ত তিন প্রকার উপাদান পাওয়া যাবে তাকে সুদি আদান-প্রদান বা কারবার বলা হবে।এখানে দেখার বিষয় এ নয় যে, সে ঋণ ব্যবসার জন্য নেয়া হয়েছে অথবা ব্যক্তিগত প্রয়োজন বা অভাব পূরণ করার উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে। সেই ঋণ-গ্রহীতা ব্যক্তি গরিব নাকি ধনী, কোম্পানি নাকি সরকার। সে যাই হোক না কেন, অনুরূপ ঋণের কারবার সুদের কারবার বলে গণ্য হবে।সুদ ও ব্যবসার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, ব্যবসাতে পণ্যের বিপরীতে মুদ্রা আদান-প্রদান করা হয়, অথবা এক জাতের পণ্যের বিপরীতে ভিন্ন জাতের পণ্য আদান-প্রদান হয়। কিন্তু সুদের কারবারে মুদ্রার বিপরীতে মুদ্রা আদান-প্রদান করা হয়, অথবা স্বজাতের পণ্য আদান-প্রদান করা হয়। ব্যবসাতে বিনিময় সুনির্দিষ্ট হয় এবং পরবর্তীতে সময়ের তারতম্যে বিনিময়ের পরিমাণে কোনো হ্রাস-বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু সুদের কারবারে বিনিময় সুনির্দিষ্ট হয় না বরং হার নির্দিষ্ট হয়। সময়ের তারতম্যে বিনিময়ের মোট পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।সুদ বর্জন করে ব্যবসা ও উন্নয়নের গতিকে বহমান রাখার জন্য ইসলাম অনুমোদিত পন্থাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পন্থা হলো, মুজারাবা, মুশারাকা, আকদে ইজারা, আকদে ইসতিসনা, বাইয়ে সলম, বাইয়ে মুরাবাহা ও মুআজ্জাল।সুদের ব্যাপারে ইসলাম যে পরিমাণ কঠোর কথা বলেছে, অন্য কোনো গুনাহর ব্যাপারে সে পরিমাণ কঠোর কথা বলেনি। সেজন্য সুদ ও সুদি কারবার থেকে বাঁচতে হবে আমাদের।এসকে/এইচএ

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*