ঘুমের মধ্যে লালা ঝরে কেন? কোন রো’গের লক্ষণ নয় তো? দেখেনিন

শুধু কি শিশুদের মুখ দিয়েই লালা ঝরে! আসলে ছোট-বড় বিভেদে নয় সবার মুখেই লালা উৎপন্ন হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুখ দিয়ে লালা ঝরতে পারে, তা ছোট হোক বা বড়দের। বিশেষ করে ঘুমের মধ্যে অনেকের মুখ দিয়ে লালা ঝরে বালিশ ভিজে যায়!

বিষয়টি বিব্রতকর হলেও কিন্তু হেলাফেলার নয়। কারণ লালা ঝরার সমস্যাটি হতে পারে শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার লক্ষণ। আবার স্বাভাবিকভাবে শোয়ার ধরন পরিবর্তনের কারণেও ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা ঝরতে পারে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক ঘুমের মধ্যে লালা ঝরে কেন? এর প্রতিকারই বা কী?

মানবদেহ প্রতিদিন ১ লিটারেরও বেশি লালা উৎপাদন করে। এটি লালা গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত হয়ে থাকে। জেগে থাকা অবস্থায় আমরা লালা ঝরতে দেই না, সাধারণত তা গিলে ফেলা হয়। পরক্ষণে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে পুনরায় লালা উৎপাদিত হতে থাকে। ঘুমে বিভোর থাকা অবস্থায় লালা যেহেতু গিলে ফেলা যায় না, তাই মুখে লালা জমতে শুরু করে। এর ফলে ঠোঁটের কোণ দিয়ে লালা বাইরে ঝরে পড়ে।
রাতে কেন লালা বেশি ঝরে?

অনেকেই ঘুমের মধ্যে মুখ খুলে ঘুমিয়ে থাকেন। আবার কেউ উপুর হয়ে ঘুমান। এসব ক্ষেত্রে লালা ঝরার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অনেকেই নাক দিয়ে ঠিকভাবে নিশ্বাস নিতে পারেন না, তাই তারা মুখ খুলে শ্বাস নিয়ে থাকেন ঘুমের মধ্যে। এক্ষেত্রে মুখ দিয়ে লালা ঝরতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, উপুর হয়ে পেটে ভর দিয়ে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। ঠিক একইভাবে উপুর হয়ে ঘুমালে মুখ দিয়ে লালা ঝরতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
লালা ঝরা কোন রোগের লক্ষণ?

>> অনেকেই ভাবতে পারেন, লালা ঝরা হয়তো একটি সাধারণ বিষয়। তবে জানলে অবাক হবেন, বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে লালা ঝরতে পারে। স্ট্রোক বা সেরিব্রাল পলসিসহ একাধিক স্ক্লেরোসিস (এমএস) এর কারণেও আপনার মুখ দিয়ে নিয়মিত লালা ঝরতে পারে।

>> সর্দি বা সংক্রমণজনিত কারণে নাক বন্ধ অবস্থায় থাকলে মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার কারণে লালা ঝরতে পারে। কারণ এক্ষেত্রে ঘুমানোর সময় শ্বাস নেওয়ার জন্য যখন আপনি মুখ খুলে ঘুমাবেন; তখন লালা জমে তা বাইরে বেরিয়ে আসবে।

>> গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রিফ্লেক্স ডিসঅর্ডার (জিইআরডি) এর কারণেও মুখ থেকে লালা ঝরতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো কিছু গিলতে অসুবিধা হয়। এ সমস্যায় যারা ভুগছেন; তাদের মুখ দিয়েও লালা ঝরতে পারে।

>> কিছু ওষুধের কারণেও এমনটি ঘটতে পারে। অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ (বিশেষত ক্লোজাপাইন) এবং আলঝাইমারস চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত ওষুধসহ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের কারণে ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত লালা ঝরতে পারে।

আরও পড়ুনঃ কোন প্রাণীর অঙ্গ থেকে কন*ডম তৈরি করা হয়? জেনে নিন
>> এমএস, পারকিনসন, পেশীবহুল ডিসস্ট্রফি এবং এমনকি কিছু ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও এ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের থুতু গিলতে অসুবিধা হয়।

>> স্নায়ুজনিত বিভিন্ন ঝুঁকির কারণ হতে পারে মুখ দিয়ে লালা ঝরা। যারা নিদ্রহীনতার সমস্যায় ভুগছেন; তাদের ক্ষেত্রেও এ সমস্যাটি নিয়মিত দেখা দিতে পারে।

>> শ্বাসকষ্ট, জ্বর, অ্যালার্জি বা সাইনাস সংক্রমণের কারণে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নাক বন্ধ থাকার কারণে মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রেও মুখ দিয়ে লালা ঝরতে পারে।

>> যদি মাউথ আলসার থাকে, সেক্ষেত্রেও মুখে থুতু বেড়ে যায়। এ কারণেও লালা ঝরতে পারে। এ সময় প্রতিরোধক ওষুধ খেলে সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

লালা ঝরার সমস্যা প্রতিকারের উপায় জেনে নিন-

১. ঘুমের অবস্থান
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ঘুমের ভুল অবস্থানের কারণে মুখ দিয়ে লালা ঝরে থাকে। তাই প্রথমত, ঘুমের অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। পেটে নয় বরং পিঠে ভর দিয়ে ঘুমান। তাহলে মুখে লালা জমতে পারবে না।

২. ঘরোয়া প্রতিকার
আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, লালা শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেকের মতে, সাইট্রাসজাতীয় ফল খেলে লালা ঝরার সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। পাশাপাশি প্রচুর জল পান করতে হবে। এতে শরীর হাইড্রেট থাকবে এবং লালা ঝরার সমস্যাও কমবে।

৩. ম্যান্ডিবুলার ডিভাইস
ম্যান্ডিবুলার ডিভাইস একটি সরঞ্জাম। এটি মুখে ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আরামের সঙ্গে ঘুমাতেও পারবেন আর মুখ থেকে লালাও ঝরবে না।

৪. সিপিএপি মেশিন
ঘুমের মধ্যে যারা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন তারা এই মেশিন ব্যবহার করতে পারেন। স্লিপ অ্যাপনিয়ার সর্বাধিক প্রস্তাবিত চিকিত্সা হলো সিপিএপি মেশিন।

৫. সার্জারি
যাদের মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা ঝরে; তাদের ক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে লালা গ্রন্থিগুলো অপসারণের পরামর্শ দেন চিকিত্সকরা। এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে স্নায়বিক সমস্যা থাকে। এ কারণেই ঘুমের মধ্যে তাদের অত্যাধিক লালা ঝরে থাকে।

৬. ঘুমানোর আগে যা মানবেন
ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে মিষ্টি জাতীয় কোনো খাবার কিংবা পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন। আর ঘুমানোর ১০-১৫ মিনিট আগে একটু টক কিংবা লবণ মিশ্রিত জল পান করুন

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*