
আপনার কি হঠাৎ পেটে তীব্র ব্যথা হয়, এমনভাবে যে বসা বা দাঁড়ানোই যায় না? হতে পারে সেটি কিডনির পাথর! ছোট হলেও, এই পাথর শরীরে ভয়ঙ্কর কষ্ট তৈরি করে। কিন্তু সবসময় কি অপারেশন বা ব্যথানাশক ওষুধই একমাত্র উপায়?
নিশ্চয়ই না। প্রকৃতির অনেক উপহার আছে যা ব্যথা না বাড়িয়ে, ধীরে ধীরে শরীরকে সহায়তা করে কিডনির পাথর বের করতে ও ভবিষ্যতে নতুন পাথর তৈরি হওয়া রোধ করতে। আসুন, জেনে নিই সেই সাতটি সহজ ও প্রাকৃতিক উপায়:
১. প্রচুর পানি খান – এটাই প্রথম ধাপ
আপনার শরীরে যত বেশি পানি থাকবে, ততই প্রস্রাবে খনিজ পাতলা হবে, যা পাথর গঠনে বাধা দেয়। দিনে অন্তত ৮–১২ গ্লাস পানি খান। নারকেল জল, লেবু পানি বা হার্বাল চাও যোগ করতে পারেন, যেন একঘেয়েমি না লাগে।
টিপ: প্রস্রাব যদি হালকা হলুদ হয়, বুঝবেন আপনি ঠিকমতো হাইড্রেটেড।
২.লেবুর রস – শুধু শরবত নয়, পাথর ভাঙার বন্ধুও
লেবু বা কমলার মতো সাইট্রাস ফল কিডনির পাথর গঠনের বিরুদ্ধে কাজ করে। এগুলোতে থাকা সাইট্রেট ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে পাথর তৈরি হওয়া রোধ করে।
রোজ সকালে এক গ্লাস হালকা গরম জলে আধা লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
৩. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার – শরীর পরিষ্কার রাখে
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারে আছে অ্যাসেটিক অ্যাসিড, যা পাথর গলাতে সাহায্য করতে পারে। তবে যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তারা সাবধানে থাকবেন।
এক গ্লাস পানিতে ১ চামচ ভিনেগার মিশিয়ে দিনে এক–দুবার খান। খাওয়ার পর মুখ ভালো করে কুলি করুন।
৪.হার্বাল চা – প্রাকৃতিক উপায়ে পাথর ধুয়ে ফেলুন
প্রাকৃতিক কিছু গাছের পাতা ও মূল দিয়ে বানানো চা কিডনির যত্নে খুবই উপকারী:
ডান্ডেলিয়ন বা নেটল চা – কিডনি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
হর্সটেইল চা – প্রস্রাব বাড়িয়ে পাথর বের হতে সাহায্য করে
কর্ন সিল্ক চা – কিডনির জ্বালা-যন্ত্রণা কমায়
দিনে ১–৩ কাপ খেতে পারেন, তবে বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫. রাজমার ঝোল – ঘরোয়া ও কার্যকর
রাজমার ঝোলকে গ্রামে “পাথর ভাঙার ঝোল” বলেও ডাকা হয়! এটি শরীরে প্রাকৃতিকভাবে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায় এবং পাথর বের করতে সহায়তা করে।
সারা রাত ভিজিয়ে রাখা রাজমা সেদ্ধ করে ঝোল বানান, আর সারা দিনে অল্প অল্প করে পান করুন। রাজমাও খেতে পারেন – পুষ্টিকর তো বটেই!
৬. চাঙ্কা পিয়েদ্রা – প্রকৃতির “স্টোন ব্রেকার”
এই গাছটি বহু যুগ ধরে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে কিডনির পাথরের চিকিৎসায়। নামেই বোঝা যায়—‘পাথর ভাঙে’!
এই ভেষজ গাছের শুকনো পাতা দিয়ে দিনে ২–৩ বার চা বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আগে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করাই ভালো।
৭. নারকেল জল ও উইটগ্রাস – ভিতর থেকে শরীর পরিষ্কার
নারকেল জল শরীরকে ঠান্ডা রাখে ও হাইড্রেট করে। আর উইটগ্রাস শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে, কিডনির উপকার করে।
প্রতিদিন ১–২ গ্লাস ফ্রেশ নারকেল জল পান করুন। সকালবেলা ৩০ মিলি উইটগ্রাস জুস খাওয়া যেতে পারে।
কিডনির পাথর আবার যাতে না হয় – এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন:
সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম খান: দুধ, দই, ছানা বাদ দেবেন না
লবণ আর অতিরিক্ত মাংস কম খান: এগুলো পাথর গঠনে সাহায্য করে
পাতা ও শাক সবজিতে ভরসা রাখুন: ফাইবার কিডনির বন্ধু
ব্যায়াম করুন ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
নিয়মিত চেক-আপ করুন: একবার পাথর হলে ভবিষ্যতে সাবধান থাকা জরুরি
ডিসক্লেইমার: এই লেখার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র তথ্য দেওয়া। আপনি যদি কিডনির পাথরে আক্রান্ত হন বা কোনো ধরনের ওষুধ বা হার্বাল উপায় নিতে চান, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যদি হঠাৎ তীব্র ব্যথা, জ্বর, প্রস্রাবে রক্ত বা অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করেন – দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
শরীরকে যত্ন দিন – কারণ কিডনি কিন্তু চুপচাপ কাজ করে, যতক্ষণ না সে কষ্টে পড়ে।
Leave a Reply