
বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে নতুন এক বিতর্ক দানা বেঁধেছে। দাবি উঠেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপন করেছেন। শুধু কার্যালয় নয়, এটিকে বলা হচ্ছে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় ফেরার “কমান্ড সেন্টার”। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কি তবে এখন দিল্লির টেবিলে লেখা হচ্ছে?
দিল্লিতে ‘হাসিনা সচিবালয়’
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর তাকে শুধু নিরাপত্তা নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক কার্যালয়ও দিয়েছে ভারত সরকার। “আমার দেশ” পত্রিকার তথ্যমতে, দিল্লির এই কার্যালয় আধুনিক প্রযুক্তি, এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ ব্যবস্থা ও গোপন বৈঠকের সুবিধাসহ সাজানো হয়েছে। আড়ালে এটিকে বলা হচ্ছে ‘হাসিনা সচিবালয়’।
গোপন বৈঠক ও রোডম্যাপ
আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ কয়েকজন শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে এই কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন মায়া ও সুজিত রায় নন্দীর উপস্থিতি সেই বৈঠককে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করেছে। সেখানে নাকি আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরার রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে।
ভারতের ভূমিকায় প্রশ্ন
ভারতের প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ীর মন্তব্য বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশে যেকোনো সময় অভ্যুত্থান হতে পারে। ড. ইউনূস দেশটাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছেন, তা হয়তো ভারত মেনে নেবে না।” ফলে অনেকেই মনে করছেন, ভারত এখনও শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।
সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ
বিএনপি, এনসিপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল ভারতের এই পদক্ষেপকে সরাসরি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের মধ্যেও যারা এখনও আনুগত্য বজায় রেখেছেন, তাদের মাঝেও বিভক্তি দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী বলেছেন, “১৯৭১ সাল থেকে ভারত চেয়েছে বাংলাদেশ তাদের মতো করেই চলুক। অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও কেন আমাদের ভবিষ্যৎ অন্য দেশের রাজধানীতে নির্ধারিত হবে?”
জাতীয় ঐক্যের ডাক
ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহাদী হাসান মনে করেন, দিল্লিতে শেখ হাসিনার কার্যালয় একটি অশুভ ইঙ্গিত। “জাতীয় ঐক্য ছাড়া বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব নয়,” বলেন তিনি।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
চায়ের দোকান, বাজার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস—সবখানেই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু: “বাংলাদেশের ভাগ্য কি ঢাকার নয়, দিল্লির অচেনা ভবনে লেখা হচ্ছে?”
এখন দেখার বিষয়—বাংলাদেশ কি নিজস্ব রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ লিখবে, নাকি বিদেশি প্রভাবেই নির্ধারিত হবে আগামী দিনের দিকনির্দেশনা।
Leave a Reply