এইমাত্র পাওয়া : ‘অ্যারিন’ বিপজ্জনক ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত, মহাশক্তি নিয়ে ধেয়ে আসছে ঘণ্টায় ২৬০ কিমি গতিতে

অত্যন্ত শক্তিশালী রূপ নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে ধেয়ে আসছে হ্যারিকেন ‘অ্যারিন’। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এটি ভয়াবহ গতিতে শক্তি অর্জন করেছে এবং এখন এটি ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার একটি হ্যারিকেনে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, হ্যারিকেনটির সর্বোচ্চ স্থায়ী বাতাসের গতি বর্তমানে ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বা ১৬০ মাইল, যা একে বছরের অন্যতম বিপজ্জনক ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত করেছে।

শুক্রবার পর্যন্ত ‘অ্যারিন’ ছিল একটি ট্রপিক্যাল স্টর্ম। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেটি মারাত্মক হ্যারিকেনে রূপ নেয়। আবহাওয়াবিদদের মতে, এ ধরনের আচমকা শক্তি অর্জন জলবায়ু পরিবর্তনের একটি ভয়াবহ ইঙ্গিত। হ্যারিকেন সেন্টারের পরিচালক মাইক ব্রেনান বলেন, ‘অ্যারিন’ রাতারাতি অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ঝড়টি এখন বিস্ফোরকভাবে গভীর এবং তীব্র আকার ধারণ করেছে।

অ্যারিন বর্তমানে ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থান করছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটি চলতি সপ্তাহান্তে লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ, ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ এবং পুয়ের্তো রিকোর উত্তর দিক ঘেঁষে অতিক্রম করবে। এসব এলাকায় ঘণ্টায় প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইতে পারে এবং কোথাও কোথাও ছয় ইঞ্চি বা ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই বলে আপাতত জানানো হয়েছে, তবুও এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশটির প্রায় পুরো পূর্ব উপকূলজুড়ে প্রাণঘাতী ঢেউ এবং রিপ কারেন্ট তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদেরা। রিপ কারেন্ট হলো একটি সংকীর্ণ কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী স্রোত, যা সমুদ্রের পাড় থেকে সোজা গভীর পানির দিকে প্রবাহিত হয়। এটি সাধারণত চোখে দেখা যায় না, এবং সাঁতারুদের হঠাৎ করে গভীর সাগরে টেনে নিয়ে যেতে পারে।

ফ্লোরিডা, মিড-অ্যাটলান্টিক অঙ্গরাজ্য এবং বারমুডার উপকূলীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বিপজ্জনক ঢেউ ও রিপ কারেন্ট তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া হ্যারিকেনটির প্রভাবে বাহামার পূর্ব দিক ঘেঁষে এটি উত্তর ক্যারোলিনার ‘আউটার ব্যাংকস’ অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

ঝড়ের আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কোস্টগার্ড বেশ কিছু এলাকায় জাহাজ চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট থমাস ও সেন্ট জন দ্বীপ এবং পুয়ের্তো রিকোর অন্তত ছয়টি পৌরসভা, যার মধ্যে সান হুয়ান অন্যতম। এখানে বন্দরগুলোতে সব ধরনের নৌ চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর আটলান্টিক অঞ্চলে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সংখ্যক হ্যারিকেন দেখা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডল প্রশাসন (NOAA) জানায়, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ক্যাটাগরি-৪ ও ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার ঝড়ের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা বিশ্বের জন্য একটি বড় ধরনের জলবায়ু হুমকি।

হ্যারিকেন অ্যারিন ২০২৫ সালের আটলান্টিক হ্যারিকেন মৌসুমের প্রথম বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়। এর গতি, দিক পরিবর্তন এবং সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে নানাভাবে সতর্ক করছেন আবহাওয়াবিদ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি ঘোলাটে হলেও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদে থাকতে এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*